Sonar Medel- Purnendu potri

সোনার মেডেল
পূর্ণেন্দু পত্রী


বাবু মশাইরা
গাঁ গেরাম থেকে ধুলো মাটি ঘসটে ঘসটে
আপনাদের কাছে এয়েছি।
কি চাক্ চিকান শহর বানিয়েছেন গো বাবুরা।
রোদ পড়লে জোছনা লাগলে মনে হয়
কাল-কেউটের গাঁ থেকে খসে পড়া
রুপোর তৈরী একখান লম্বা খোলস।
মনের উনোনে ভাতের হাঁড়ি হাঁ হয়ে আছে খিদেয়
চালডাল তরিতরকারি শাকপাতা কিছু নেই
কিন্তু জল ফুটছে টগবগিয়ে।

বাবু মশাইরা,
লোকে বলেছিলো,ভালুকের নাচ দেখালে
আপনারা নাকি পয়সা দেন।
যখন যেমন বললেন, নেচে নেচে হদ্দ
পয়সা দেবেন নি?
লোকে বলেছিলো ভানুমতির খেল দেখালে
আপনারা নাকি সোনার মেডেল দেন।
নিজের করাতে নিজেকে দু খান করে
আবার জুড়ে দেখালুম,
আকাশ থেকে সোনালী পাখির ডিম পেড়ে
ভেজে খাওয়ালুম গরম ওমলেট,
বাঁজা গাছে বাজিয়ে দিলুম ফুলের ঘুঙুর
সোনার মেডেল দিবেন নি?

বাবু মশাইরা
সেই ল্যাংটোবেলা থেকে বড়ো শখ
ঘরে ফিরবো বুকে সোনার মেডেল টাঙিয়ে।
আর বৌ বাচ্চাদের মুখে
ফাঁটা কার্পাসতুলোর হাসি ফুটিয়ে বলবো-
দেখিস! আমি মারা গেলে
আমার গা থেকে গজাবে
চন্দন গন্ধের বন।

সোনার মেডেল দিবেন নি?

Ami shomvoboto-Humayun Azad

আমি সম্ভবত খুব ছোট কিছুর জন্য
– হুমায়ুন আজাদ



আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে
আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।

Snan-Joy goswami

স্নান
 

জয় গোস্বামী


সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার -
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …

জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান
হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।

আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?

শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা;
সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব ব’লে
এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।

দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত -
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায় ।

manush-nirmolendu goon

আমি হয়তো মানুষ নই, 
মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, 
এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম,
সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।
আমি হয়তো মানুষ নই, 
সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না,
সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, 
ছবি আঁকছি,সকালবেলা, 
দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে ।
অবাক লাগে ।

আমি স্বেচ্ছাচারী- shokti chattopadhyay

তীরে কি প্রচণ্ড কলরব
‌' জলে ভেসে যায় কার শব
কোথা ছিলো বাড়ি ? '

রাতের কল্লোল শুধু বলে যায় ___ ' আমি স্বেচ্ছাচারী।'


সমুদ্র কি জীবিত ও মৃতে
এভাবে সম্পূর্ণ অতর্কিতে
সমাদরণীয় ?
কে জানে গরল কিনা প্রকৃত পানীয়
অমৃতই বিষ !
মেধার ভিতর শ্রান্তি বাড়ে অহর্নিশ।


তীরে কি প্রচণ্ড কলরব
‌' জলে ভেসে যায় কার শব
কোথা ছিলো বাড়ি ? '

রাতের কল্লোল শুধু বলে যায় ___ ' আমি স্বেচ্ছাচারী।'

ঈশ্বরকে ঈভ- kobita singho

আমিই প্রথম
জেনেছিলাম
উত্থান যা
তারই ওপিঠ
অধঃপতন !

আলোও যেমন
কালোও তেমন
তোমার সৃজন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।

তোমায় মানা
বা না মানার
সমান ওজন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।

জ্ঞানবৃক্ষ
ছুঁয়েছিলাম
আমিই প্রথম
আমিই প্রথম
লাল আপেলে
পয়লা কামড়
দিয়েছিলাম
প্রথম আমিই
আমিই প্রথম।

আমিই প্রথম
ডুমুর পাতায়
লজ্জা এবং
নিলাজতায়
আকাশ পাতাল
তফাৎ করে
দেওয়াল তুলে
দিয়েছিলাম
আমিই প্রথম।

আমিই প্রথম
নর্ম সুখের
দেহের বোঁটায়
দুঃখ ছেনে
অশ্রু ছেনে
তোমার পুতুল
বানানো যায়
জেনেছিলাম
হেসে কেঁদে
তোমার মুখই
শিশুর মুখে
দেখেছিলাম
আমিই প্রথম।

আমিই প্রথম
বুঝেছিলাম
দুঃখে সুখে
পুণ্য পাপে
জীবন যাপন
অসাধারণ
কেবল সুখের
শৌখিনতার
সোনার শিকল
আমিই প্রথম
ভেঙেছিলাম
হইনি তোমার
হাতের সুতোয়
নাচের পুতুল
যেমন ছিল
অধম আদম

আমিই প্রথম
বিদ্রোহিনী
তোমার ধরায়
আমিই প্রথম।

প্রিয় আমার
হে ক্রীতদাস
আমিই প্রথম
ব্রাত্যনারী
স্বর্গচ্যুত
নির্বাসিত
জেনেছিলাম
স্বর্গেতর
স্বর্গেতর
মানব জীবন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।

তোমাকে বলছি, মিনাজেল উসিটেরন- Salim Reza Newton

ভালোবাসাটাসা বুকের ভেতরে রাখো:
পর্দা খেও না, মঞ্চে উঠো না, প্লিজ!
বাক্য-বাহারে উজ্জ্বল জিঙ্গেলে
সাজিয়ে রেখো না বেদনার কিসমিস।

এই যে উঠানে উচ্ছের মৃদু চারা,
ওখানে গগণে আকাশকুসুম-তারা—
যারা আছে, যারা মিশে গেছে রোদ্দুরে
পিরিতি-কাঙাল সবাই বাক্যহারা।

জলহীনা মাটি, ব্যাকটেরিয়ার ছানা,
ঘরহারা কেঁচো, চোখছাড়া সন্ত্রাসী—
ওরাও তোমারই মতো খুঁজে মরে প্রেম
অন্তরীক্ষে ওদেরই ব্যর্থ বাঁশি

হাহাকার তোলে। সুনামি-সুনীল পাপে
ডুবে যাওয়া দ্বীপে, দূরের অন্তরীপে
যেখানে যাকেই দেখছ সেটা তো তুমিই!
তুমিই রয়েছ সন্তানে-সন্তাপে।

কাকে হারাবার ভয়ে তবে তুমি ভীত?
নিজেকে চেনো নি? উপনিষদের ওমে?
পরম ব্রহ্মে অথবা আনাল হকে
ফানা-ফানা হয়ে তুমিই গরমে-হিমে।

রিম্যান্ডে-নেওয়া তৌহিদ আজ তুমিই—
পড়ছ কলেমা নিখিলের ওঙ্কারে;
জীব ও জড়ের বেদনার সব ভাষা
ভালোবাসা হবে অঙ্কুরে-অঙ্গারে।

খালি খালি আর দুঃখ কোরো না সোনা—
তুমি তো জীবিত নও, তুমি মুর্দা না।
সুস্মিত হেসে ‘স্বাগত’ বোলো সবাইকে—
বোলো ভালোবাসা অনঙ্গ আফসানা।