Sonar Medel- Purnendu potri

সোনার মেডেল
পূর্ণেন্দু পত্রী


বাবু মশাইরা
গাঁ গেরাম থেকে ধুলো মাটি ঘসটে ঘসটে
আপনাদের কাছে এয়েছি।
কি চাক্ চিকান শহর বানিয়েছেন গো বাবুরা।
রোদ পড়লে জোছনা লাগলে মনে হয়
কাল-কেউটের গাঁ থেকে খসে পড়া
রুপোর তৈরী একখান লম্বা খোলস।
মনের উনোনে ভাতের হাঁড়ি হাঁ হয়ে আছে খিদেয়
চালডাল তরিতরকারি শাকপাতা কিছু নেই
কিন্তু জল ফুটছে টগবগিয়ে।

বাবু মশাইরা,
লোকে বলেছিলো,ভালুকের নাচ দেখালে
আপনারা নাকি পয়সা দেন।
যখন যেমন বললেন, নেচে নেচে হদ্দ
পয়সা দেবেন নি?
লোকে বলেছিলো ভানুমতির খেল দেখালে
আপনারা নাকি সোনার মেডেল দেন।
নিজের করাতে নিজেকে দু খান করে
আবার জুড়ে দেখালুম,
আকাশ থেকে সোনালী পাখির ডিম পেড়ে
ভেজে খাওয়ালুম গরম ওমলেট,
বাঁজা গাছে বাজিয়ে দিলুম ফুলের ঘুঙুর
সোনার মেডেল দিবেন নি?

বাবু মশাইরা
সেই ল্যাংটোবেলা থেকে বড়ো শখ
ঘরে ফিরবো বুকে সোনার মেডেল টাঙিয়ে।
আর বৌ বাচ্চাদের মুখে
ফাঁটা কার্পাসতুলোর হাসি ফুটিয়ে বলবো-
দেখিস! আমি মারা গেলে
আমার গা থেকে গজাবে
চন্দন গন্ধের বন।

সোনার মেডেল দিবেন নি?

Ami shomvoboto-Humayun Azad

আমি সম্ভবত খুব ছোট কিছুর জন্য
– হুমায়ুন আজাদ



আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে
আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।

Snan-Joy goswami

স্নান
 

জয় গোস্বামী


সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার -
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …

জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান
হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।

আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?

শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা;
সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব ব’লে
এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।

দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত -
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায় ।

manush-nirmolendu goon

আমি হয়তো মানুষ নই, 
মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, 
এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম,
সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।
আমি হয়তো মানুষ নই, 
সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না,
সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, 
ছবি আঁকছি,সকালবেলা, 
দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে ।
অবাক লাগে ।

আমি স্বেচ্ছাচারী- shokti chattopadhyay

তীরে কি প্রচণ্ড কলরব
‌' জলে ভেসে যায় কার শব
কোথা ছিলো বাড়ি ? '

রাতের কল্লোল শুধু বলে যায় ___ ' আমি স্বেচ্ছাচারী।'


সমুদ্র কি জীবিত ও মৃতে
এভাবে সম্পূর্ণ অতর্কিতে
সমাদরণীয় ?
কে জানে গরল কিনা প্রকৃত পানীয়
অমৃতই বিষ !
মেধার ভিতর শ্রান্তি বাড়ে অহর্নিশ।


তীরে কি প্রচণ্ড কলরব
‌' জলে ভেসে যায় কার শব
কোথা ছিলো বাড়ি ? '

রাতের কল্লোল শুধু বলে যায় ___ ' আমি স্বেচ্ছাচারী।'

ঈশ্বরকে ঈভ- kobita singho

আমিই প্রথম
জেনেছিলাম
উত্থান যা
তারই ওপিঠ
অধঃপতন !

আলোও যেমন
কালোও তেমন
তোমার সৃজন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।

তোমায় মানা
বা না মানার
সমান ওজন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।

জ্ঞানবৃক্ষ
ছুঁয়েছিলাম
আমিই প্রথম
আমিই প্রথম
লাল আপেলে
পয়লা কামড়
দিয়েছিলাম
প্রথম আমিই
আমিই প্রথম।

আমিই প্রথম
ডুমুর পাতায়
লজ্জা এবং
নিলাজতায়
আকাশ পাতাল
তফাৎ করে
দেওয়াল তুলে
দিয়েছিলাম
আমিই প্রথম।

আমিই প্রথম
নর্ম সুখের
দেহের বোঁটায়
দুঃখ ছেনে
অশ্রু ছেনে
তোমার পুতুল
বানানো যায়
জেনেছিলাম
হেসে কেঁদে
তোমার মুখই
শিশুর মুখে
দেখেছিলাম
আমিই প্রথম।

আমিই প্রথম
বুঝেছিলাম
দুঃখে সুখে
পুণ্য পাপে
জীবন যাপন
অসাধারণ
কেবল সুখের
শৌখিনতার
সোনার শিকল
আমিই প্রথম
ভেঙেছিলাম
হইনি তোমার
হাতের সুতোয়
নাচের পুতুল
যেমন ছিল
অধম আদম

আমিই প্রথম
বিদ্রোহিনী
তোমার ধরায়
আমিই প্রথম।

প্রিয় আমার
হে ক্রীতদাস
আমিই প্রথম
ব্রাত্যনারী
স্বর্গচ্যুত
নির্বাসিত
জেনেছিলাম
স্বর্গেতর
স্বর্গেতর
মানব জীবন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।

তোমাকে বলছি, মিনাজেল উসিটেরন- Salim Reza Newton

ভালোবাসাটাসা বুকের ভেতরে রাখো:
পর্দা খেও না, মঞ্চে উঠো না, প্লিজ!
বাক্য-বাহারে উজ্জ্বল জিঙ্গেলে
সাজিয়ে রেখো না বেদনার কিসমিস।

এই যে উঠানে উচ্ছের মৃদু চারা,
ওখানে গগণে আকাশকুসুম-তারা—
যারা আছে, যারা মিশে গেছে রোদ্দুরে
পিরিতি-কাঙাল সবাই বাক্যহারা।

জলহীনা মাটি, ব্যাকটেরিয়ার ছানা,
ঘরহারা কেঁচো, চোখছাড়া সন্ত্রাসী—
ওরাও তোমারই মতো খুঁজে মরে প্রেম
অন্তরীক্ষে ওদেরই ব্যর্থ বাঁশি

হাহাকার তোলে। সুনামি-সুনীল পাপে
ডুবে যাওয়া দ্বীপে, দূরের অন্তরীপে
যেখানে যাকেই দেখছ সেটা তো তুমিই!
তুমিই রয়েছ সন্তানে-সন্তাপে।

কাকে হারাবার ভয়ে তবে তুমি ভীত?
নিজেকে চেনো নি? উপনিষদের ওমে?
পরম ব্রহ্মে অথবা আনাল হকে
ফানা-ফানা হয়ে তুমিই গরমে-হিমে।

রিম্যান্ডে-নেওয়া তৌহিদ আজ তুমিই—
পড়ছ কলেমা নিখিলের ওঙ্কারে;
জীব ও জড়ের বেদনার সব ভাষা
ভালোবাসা হবে অঙ্কুরে-অঙ্গারে।

খালি খালি আর দুঃখ কোরো না সোনা—
তুমি তো জীবিত নও, তুমি মুর্দা না।
সুস্মিত হেসে ‘স্বাগত’ বোলো সবাইকে—
বোলো ভালোবাসা অনঙ্গ আফসানা।

bonolota sen - জীবনানন্দ দাশ

০১.

বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে ;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারি দিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য ; অতি দূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে ; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।


সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে ; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল ;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তথন গল্পের তরে জেনাকীর রঙে ঝিলমিল ;
সব পাখী ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ-জীবনের সব লেন দেন ;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

০২.

কুড়ি বছর পরে

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি
আবার বছর কুড়ি পরে-
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে-
কার্তিকের মাসে-
তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে - তখন হলুদ নদী
নরম নরম হয় শর কাশ হোগলায়- মাঠের ভিতরে!
অথবা নাইকো ধান ক্ষেতে আর,
ব্যস্ততা নাইকো আর,
হাঁসের নীড়ের থেকে খড়
পাখির নীড়ের থেকে খড়
ছড়াতেছে; মনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল।
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি, বছরের পার,-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার!
হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু -সরু কালো-কালো ডালপালা মুখ নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা জামের,
ঝাউয়ের-আমের;
কুড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে!
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার!
তখন হয়তো মাঠে হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা নামে-
বাবলার গলির অন্ধকারে
অশথের জানালার ফাঁকে
কোথায় লুকায় আপনাকে!
চোখের পাতার মতো নেমে চুপি কোথায় চিলের ডানা থামে।
সোনালি সোনালি চিল- শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!

০৩.

ঘাস

কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়
পুথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;
কাঁচা বাতাবির মতো সবুজ ঘাস-তেমনি সুঘ্রাণ-
হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিড়ে নিচ্ছে।
আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো
গেলাসে - গেলাসে পান করি,
এই ঘাসের শরীর ছানি- চোখে চোখে ঘষি,
ঘাষের পাখনায় আমার পালক,
ঘাষের ভিতর ঘাস হয়ে জন্মাই কোন এক নিবিড় ঘাস-মাতার
শরীরের সুস্বাদ অন্ধকার থেকে নেমে।


০৪.

হাওয়ার রাত

গভীর হাওয়ার রাত ছিল কাল- অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;
সারারাত বিস্তীর্ণ হাওয়া আমার মশারিতে খেলেছে;
মশারিটা ফুলে উঠেছে কখনো মৌসুমী সমুদ্রের পেটের মতো,
কখনো বিছানা ছিঁড়ে
নক্ষত্রের দিকে উড়ে যেতে চেয়েছে,
এক-একবার মনে হচ্ছিল আমার- আধো ঘুমের ভিতর হয়তো-
মাথার উপরে মশারি নেই আমার
স্বাতী তারার কোল ঘেঁসে নীল হাওয়ার সমুদ্রে শাদা বকের মতো উড়ছে সে!
কাল এমন চমৎকার রাত ছিল।
সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল-আকাশে একতিল ফাঁক ছিল না;
পৃথিবীর সমস্ত ধূসরপ্রিয় মৃতদের মুখও সেই নক্ষত্রের ভিতর দেখেছি আমি;
অন্ধকার রাতে অশ্বত্থের চুড়ায় প্রেমিক চিলপুরুষের শিশির - ভেজা চোখের মতো
ঝলমল করছিল সমস্ত নক্ষত্রেরা;
জোছনারাতে বেবিলনের রানির ঘাড়ের ওপর চিতার উজ্জ্বল চামড়ার
শালের মতো জ্বলজ্বল করছিল বিশাল আকাশ!
কাল এমন আশ্চর্য রাত ছিল।

নে নক্ষত্রেরা আকাশের্ বুকে হাজার-হাজার বছর আগে ম'রে গিয়েছে
তারাও কাল জানালার থিবর দিয়ে অসংখ্য মৃত আকাশ সঙ্গে করে এনেছে
যে রুপসীদের আমি এশিরিয়ায়, মিশরে বিদিশায় ম'রে যেতে দেখেছি
কাল তারা অতিদূরে আকাশের সীমানায় কুয়াশায় কুয়াশায় দীর্ঘ বর্শা হাতে করে
কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে গেছে যেন-
মৃত্যুকে দলিত করবার জন্য?
জীবনের গভীর জয় প্রকাশ করবার জন্য?
প্রেমের ভয়াবহ গম্ভীর স্তম্ভ তুলবার জন্য?
আড়ষ্ট- অভিভূত হয়ে গেছি আমি,
কাল রাতের প্রবল নীল অত্যাচার আমাকে ছিঁড়ে ফেলেছে যেন;
আকাশের বিরামহীন বিস্তৃর্ণ ডানার ভিতর
পৃথিবী কিটের মতো মুছে গিয়েছে কাল!
আর উত্তুঙ্গ বাতাস এসেছে আকাশের বুক থেকে নেমে
আমার জানালার ভিতর দিয়ে, শাঁই শাঁই করে,
সিংহের হুঙ্কারে উৎক্ষিপ্ত হরিৎ প্রান্তরের অজস্র জেব্রার মতো!
হৃদয় ভরে গিয়েছে আমার বিস্তীর্ণ ফেল্টের সবুজ ঘাসের গন্ধে,
দিগন্ত-প্লাবিত বলীয়ান রৌদ্রের আঘ্রাণে
মিলনোন্মত্ত বাঘিনীর গর্জনের মতো অন্ধকারের চঞ্চল বিরাট সজীব রোমশ উচ্ছ্বাসে,
জীবনের দুর্দান্ত নীল মত্ততায়!

আমার হৃদয় পৃথিবী ছিঁড়ে উড়ে গেল,
নীল হাওয়ার সমুদ্রে স্ফীত মাতাল বেলুনের মতো গেল উড়ে,
একটা দূর নক্ষত্রের মাস্তুলকে তারায়-তারায় উড়িয়ে দিয়ে চলল
একটা দুরন্ত শুকনের মতো।

০৫.

আমি যদি হতাম

আমি যদি হতাম বনহংস;
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোন এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শবের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে,
তাহলে আজ এই ফাল্গুনের রাতে
ঝাউয়ের শাখার পেছনে চাঁদ উঠতে দেখে
আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে
আকাশের রুপালী শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম-
তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-
নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালী ফুলের মতো অজস্র তারা,
শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে
সোনালী ডিমের মতো
ফাল্গুনের চাঁদ।

হয়তো গুলির শব্দ;
আমাদের তীর্যক গতিস্রোত,
আমাদের পাখায় পিস্টনের উল্লাস,
আমাদের কন্ঠে উত্তর হাওয়ার গান!
হয়তো গুলির শব্দ আবার :
আমাদের স্তব্ধতা,
আমাদের শান্তি।
আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মৃত্যু আর থাকত না;
থাকত না আজকের জীবনের টুকরো টুকরো সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার;
আমি যদি বনহংস হতাম,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোন এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে।


০৬.

হায় চিল

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে!
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!


০৭.


বুনো - হাঁস

পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে-
জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাঁদের আহ্বানে
বুনো হাঁস পাখা মেলে-শাঁই-শাঁই শব্দ শুনি তার;
এক-দুই-তিন-চার-অজস্র-অপার-
রাত্রির কিনার দিয়ে তাহাদের ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া
এঞ্জিনের মতো শব্দে; ছুটিতেছে - ছুটিতেছে তারা।
তারপর পরে থাকে, নক্ষত্রের বিশাল আকাশ,
হাঁসের গায়ের ঘ্রাণ-দু-একটা কল্পনার হাঁস;
মনে পড়ে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা সান্যালের মুখ;
উড়ুক উড়ুক তারা পউষের জোছনায় নীরবে উড়ুক
কল্পনার হাঁস সব-পুথিবীর সব ধ্বনি সব রং মুছে গেল পর
উড়ুক উড়ুক তারা হৃদয়ের শব্দহীন জোছনার ভিতর।



০৮.

শঙ্খমালা

কান্তারের পথ ছেড়ে সন্ধ্যার আঁধারে
সে কে এক নারী এসে ডাকিল আমারে,
বলিল , তোমারে চাই :
বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ
খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি - কুয়াশার পাখনায় -
সন্ধ্যার নদীর জলে নামে যে আলোক
জোনাকির দেহ হতে - খুঁজেছি তোমারে সেইখানে -
ধূসর পেঁচার মতো ডানা মেলে অঘ্রাণের অন্ধকারে
ধানসিঁড়ি বেয়ে - বেয়ে
সোনার সিঁড়ির মতো ধানে আর ধানে
তোমারে খুঁজেছি আমি নির্জন পেঁচার মতো প্রাণে।
দেখিলাম দেহ তার বিমর্ষ পাখির রঙে ভরা;
সন্ধ্যার আঁধারে ভিজে শিরীষের ডালে সেই পাখি দেয় ধরা -
বাঁকা চাঁদ থাকে যার মাথার উপর,
শিঙের মতন বাঁকা নীল চাঁদ শোনে যার স্বর।
কড়ির মতন শাদা মুখ তার;
দুইথানা হাত তার হিম;
চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম
চিতা জ্বলে : দক্ষিণের শিয়রে মাথা শঙ্খমালা যেন পুড়ে যায়
সে আগুনে হায়।
চোখে তার
যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার!
স্তন তার
করুণ শঙ্খের মতো- দুধে আর্দ্র - কবেকার শঙ্খিনীমালার!
এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।



০৯.

নগ্ন নির্জন হাত

আবার আকাশের অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে :
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।
যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়েছে উঠছে।
মনে হয় কোনো বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে।
ভারতসমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে
অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে
আজ নেই, কোন এক নগরী ছিল একদিন,
কোন এক প্রাসাদ ছিল;
মূল্যবাদ আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ;
পারস্য গালিচা, কাশ্মিরি শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল,
আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা;
আর তুমি নারী -
এই সব ছিল সেই জগতে একদিন।
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল;
অনেক কমলা রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;
তোমার মুখের্ রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না।
ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী,
অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা,
লুপ্ত নাশপাতির গন্ধ,
অজস্র হরিণ ও সিংহের ছালের ধূসর পান্ডুলিপি,
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস -
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
পর্দায়, গালিচায় রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ,
রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ!
তোমার নগ্ন নির্জন হাত;
তোমার নগ্ন নির্জন হাত।



১০.


শিকার

ভোর;
আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল :
চারিদিকে পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ।
একটি তারা এখনো আকাশে রয়েছে :
পাড়াগাঁর বাসরঘরে সবচেয়ে গোধূলী - মদির মেয়েটির মতো;
কিংবা মিশরের মানুষী তার বুকের থেকে যে - মুক্তা
আমার নীল মদের গেলাসে রেখেছিল
হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তেমনি =
তেমনি একটি তারা আকাশে জ্বলছে এখনো।
হিমের রাতে শরীর 'উম্' রাখবার জন্য দেশোয়ালিরা
সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলেছে -
মোরগ ফুলের মতো লাল আগুন;
শুকনো অশ্বত্থ পাতা দুমুড়ে এখনো জ্বলছে তাদের;
সূর্যের আলোয় তার রঙ কুসুমের মতো নেই আর;
হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।
সকালের আলোয় টলমল শিশিরে চারিদিকের বন ও আকাশ
ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে।

ভোর;
সারারাত চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে - বাঁচিয়ে
নক্ষত্রহীন, মেহগনির মতো অন্ধকারে সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে
ঘুরে ঘুরে
সুন্দর বাদামি হরিণ এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল।
এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে;
কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ সুগন্ধী ঘাস ছিঁড়ে - ছিঁড়ে খাচ্ছে;
নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে সে নামল -
ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল শরীরটাকে স্রোতের মতো একটা আবেগ দেওয়ার জন্য
অন্ধকারের হিম কুঞ্চিত জরায়ু ছিঁড়ে ভোরের রৌদ্রের মতো
একটা বিস্তীর্ণ উল্লাস পাবার জন্য,
এই নীল আকাশের নিচে সূর্যের সোনার বর্শার মতো জেগে উঠে
সাহসে সাধে সৌন্দর্যে হরিণীর পর হরিণীকে চমক লাগিয়ে দেবার জন্য
একটা অদ্ভুত শব্দ।
নদীর জল মচকাফুলের মতো লাল।
আগুন জ্বলল আবার- উষ্ণ লাল হরিণের মাংস তৈরি হয়ে এল।
নক্ষত্রের নিচে ঘাসের বিছানায় বসে অনেক পুরনো শিশিরভেজা গল্প;
সিগারেটের ধোঁয়া;
টেরিকাটা কয়েকটা মানুষের মাথা;
এলোমেলো কয়েকটা বন্ধুক- হিম- নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম।


১১.

হরিণেরা

স্বপ্নের ভিতরে বুঝি- ফাল্গুনের জোছনার ভিতরে
দেখিলাম পলাশের বনে খেলা করে
হরিণেরা; রুপালি চাঁদের হাত শিশিরের পাতায়;
বাতাস ঝাড়িছে ফাঁকে- বনে বনে - হরিণের চোখে;
হরিণেরা খেলা করে হাওয়া আর মুক্তার আলোকে।
হীরের প্রদীপ জ্বেলে শেফালিকা বোস যেন হাসে
হিজল ডালের পিছে অগণন বনের আকাশে-
বিলুপ্ত ধূসর কোন পৃথিবীর শেফালিকা আহা;
ফাল্গুনের জোছনায় হরিণেরা জানে শুধু তাহা।
বাতাস ঝাড়িছে ডানা, হীরা ঝরে হরিণের চোখে-
হরিণেরা খেলা করে হাওয়া আর হীরার আলোকে।



১২.

বেড়াল

সারাদিন একটা বিড়ালের সঙ্গে ঘুরে ফিরে কেবলই আমার দেখা হয় :
গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতর, বাদামি পাতার ভিড়ে;
কোথাও কয়েক টুকরো মাছের কাঁটার সফলতার পর
তারপর সাদা মাটির কঙ্কালের ভিতর
নিজের হৃদয়কে নিয়ে মৌমাছির মতো নিমগ্ন হয়ে আছে দেখি;
কিন্তু তবুও তারপর কৃষ্ণচূড়ার গায়ে নখ আঁচড়াচ্ছে,
সারাদিন সূর্যের পিছনে-পিছনে চলেছে সে।
একবার তাকে দেখা যায়,
একবার হারিয়ে যায় কোথায়।
হেমন্তের সন্ধ্যায় জাফরান রং -এর সূর্যের নরম শরীরে
শাদা থাবা বুলিয়ে বুলিয়ে খেলা করতে দেখলাম তাকে;
তারপর অন্ধকারকে ছোট ছোট বলের মতো থাবা দিয়ে লুফে আনল সে
সমস্ত পৃথিবীর রভিতর ছড়িয়ে দিল।



১৩.

সুদর্শনা

একদিন ম্লান হেসে আমি
তোমার মতন এক মহিলার কাছে
যুগের সঞ্চিত পণ্যে লীন হতে গিয়ে
অগ্নিপরিধির মাঝে সহসা দঁড়িয়ে
শুনেছি কিন্নরকন্ঠ দেবদারু গাছে,
দেখেছি অমৃতসুর্য আছে।
সবচেয়ে আকাশ নক্ষত্র ঘাস চন্দ্রমল্লিকার রাত্রি ভালো,
তবুও সময় স্থির নয়,
আরেক গভীরতর শেষ রূপ চেয়ে
দেখেছে সে তোমার বলয়।
এই পৃথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন
তোমার শরীর; তুমি দান করো নি তো;
সময় তোমাকে সব দান করে মৃতদার ব'লে
সুদর্শনা, তুমি আজ মৃত।



১৪.

অন্ধকার

গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার;
তাকিয়ে দেখলাম পান্ডুর চাঁদ বৈতরণীর থেকে তার অর্ধেক ছায়া
গুটিয়ে নিয়েছে যেন
কীর্তিনাশার দিকে ।

ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়েছিলাম- পউষের রাতে-
কোনদিন আর জাগবো না জেনে
কোনদিন জাগবো না আমি- কোনোদিন জাগবো না আর-
হে নীল কস্তুরী আভার চাঁদ,
তুমি দিনের আলো নও, উদম্য নও, স্বপ্ন নও,
হৃদয়ে যে মৃত্যুর শান্তি ও স্থিরতা রয়েছে,
রয়েছে যে অগাধ ঘুম,
সে-আস্বাদ নষ্ট করবার মতো শেলতীব্রতা তোমার নেই,
তুমি প্রদাহ প্রবহমান যন্ত্রণা নও--

জানো না কি চাঁদ,
নীল কস্তুরী আভার চাঁদ,
জানো না কি নিশীথ,
আমি অনেক দিন-- অনেক অনেক দিন
অন্ধকারের সারাতসারে অনন্ত মৃত্যুর মতো মিশে থেকে
হঠাত ভোরের আলোর মুর্খ উচ্ছাসে নিজেকে পৃথিবীর জীব ব'লে
বুঝতে পেরেছি আবার,
ভয় পেয়েছি,
পেয়েছি অসীম দুনির্বার বেদনা;
দেখেছি রক্তিম আকাশে সূর্য জেগে উঠে
মানুষিক সৈনিক সেজে পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য
আমাকে নির্দেশ দিয়েছে;

আমার সমস্ত হৃদয় ঘৃণায়- বেদনায়- আক্রোশে ভরে গিয়েছে ;
সূর্যের রৌদ্রে আক্রান্ত এই পৃথিবী যেন কোটি কোটি শুয়োরের আর্তনাদে
উৎসব শুরু করেছে।
হায়, উৎসব!

হৃদয়ের অবিরল অন্ধকারের ভিতর সূর্যকে ডুবিয়ে ফেলে
আবার ঘুমোতে চেয়েছি আমি, অন্ধকারের স্তনের ভিতর যোনির ভিতর অনন্ত মৃত্যুর
মতো মিশে থাকতে চেয়েছি।

কোনোদিন মানুষ ছিলাম না আমি।
হে নর, হে নারী ,
তোমাদের পৃথিবীকে চিনিনি কোনোদিন ;
আমি অন্য কোন নক্ষত্রের জীব নই।

যেখানে স্পন্দন, সংঘর্ষ, গীত, যেখানে উদ্যম, চিন্তা, কাজ,
সেখানেই সূর্য , পৃথিবী, বৃহস্প্রতি, কালপুরুষ, অনন্ত আকাশগ্রন্থি,
শত শত শুকরীর প্রসব বেদনার আড়ম্বর ;
এইসব ভয়াবহ আরতী!


গভীর অন্ধকারের ঘুমের আস্বাদে আমার আত্মা লালিত;
আমাকে জাগাতে চাও কেন?
অরব অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠবো না আর ;
তাকিয়ে দেখবো না নির্জন বিমিশ্র চাঁদ বৈতরণীর থেকে
অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে
কীর্তিনাশার দিকে ।

ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়ে থাকবো- ধীরে- পউষের রাতে
কোনোদিন জাগব না জেনে-
কোনদিন জাগব না আমি- কোনদিন আর।


১৫.

কমলালেবু

একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোমো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।



১৬.

শ্যামলী

শ্যামলী, তোমার মুখ সেকালের শক্তির মতন :
যখন জাহাজে চড়ে যুবকের দল
সুদূর নতুন দেশে সোনা আছে ব'লে
মহিলারই প্রতিভায় সে ধাতু উজ্জ্বল
টের পেয়ে, দ্রাক্ষা দুধ ময়ূরশয্যার কথা ভুলে
সকালের রূঢ় রৌদ্র ডুবে যেত কোথায় আকূলে।
তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনো
আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রে নীল
দুপুরের শূণ্য সব বন্দরের ব্যথা,
বিকেলের উপকন্ঠে সাগরের চিল,
নক্ষত্র, রাত্রির জল যুবাদের ক্রন্দন সব-
শ্যামলী, করেছি অনুভব।
অনেক অপরিমেয় যুগ কেটে গেল;
মানুষকে স্থির- স্থিরতর হতে দেবে না সময়;
সে কিছূ চেয়েছে বলে এতো রক্ত নদী।
অন্ধকার প্রেরণার মতো মনে হয়
দূর সাগরের শব্দ- শতাব্দীর তীরে এসে ঝরে :
কাল কিছু হয়েছিল - হবে কি শাশ্বতকাল পরে।



০১৭.

দুজন

'আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন - কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো; - এক নক্ষত্রের নিচে তবু - একই আলো পুথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি; পুথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি? - বলে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠ সূর্য সহমর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ ভরে গেছে।
দুজনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পুথিবী ও আকাশের পাশে
এবার প্রথম এল মনে হয়- যেন কিছু চেয়ে কিছু একান্ত বিশ্বাসে।
লালচে হলদে পাতা অনুসঙ্গে জাম বট অশ্বত্থের শাখার ভিতরে
অন্ধকারে ন'ড়ে - চ'ড়ে ঘাসের উপর ঝরে পড়ে;
তারপর শান্ত্বনায় থাকে চিরকাল।
যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে - ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে :
সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দুজন; চারি দিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে; - চিলের সোনালী ডানা হেয়ছে খয়েরি;
ঘুঘুর পালক যেন ঝরে গেছে - শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু করে ঘুমাবে সে শিশিরের জলে;
ঝরিছে মরিছে সব এইখানে - বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে।
নারী তার সঙ্গীকে : ;পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি ; - তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল; - একদিন হৃদয়ে আঘাত ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝ'রে গেছে; আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না।
হৃদয়ে প্রেমর শীর্ষ আমাদের - প্রেমের অপূর্ব শিশু আরক্ত বাসনা
ফুরোত না যদি, আহা, আমাদের হুদয়ের থেকে-'
এই বলে ম্রিয়মাণ আঁচলের সর্বস্বতা দিয়ে মুখ ঢেকে
উদ্বেল কাশের বনে দাঁড়িয়ে রইল হাঁটুভর।
হলুদ রঙের শাড়ি, চোরকাঁটা বিঁধে আছে, এলোমেলো অঘ্রাণের খড়
চারি দিকে শূণ্য থেকে ভেসে এসে ছুঁয়ে ছেনে যেতেছে শরীর;
চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত , ঝরিছে শিশির; -

প্রেমিকের মনে হল : 'এই নারী- অপরূপ- খুঁজে পাবে নক্ষত্রের তীরে
যেখানে রব না আমি, রবে না মাধুরী এই, রবে না হতাশা,
কুয়াশা রবে না আর - জনিত বাসনা নিজে- বাসনার মতো ভালোবাসা
খুঁজে নেবে অমৃতের হরিণীর ভিড় থেকে উপ্সিতেরে তার।'



০১৮.

অবশেষে

এখানে প্রশান্ত মনে খেলা করে উঁচু উঁচু গাছ।
সবুজ পাতার ' পরে যখন নেমেছে এসে দুপুরের সূর্যের আঁচ
নদীতে স্মরণ করে একবার পৃথিবীর সকালবেলাকে।
আবার বিকলে হলে অতিকায় হরিণের মতো শান্ত থাকে
এই সব গাছগুলো, -যেন কোনো দূর থেকে অস্পষ্ট বাাতস
বাঘের ঘ্রাণের মোত হৃদয়ে জাগায়ে যায় ত্রাস;
চেয়ে দেখ- ইহাদের পরস্পর নীলিম বিন্যাস
নড়ে উঠে ত্রস্ততায়, - আধো নীল আকাশের বুকে
হরিণের মতো দ্রুত ঠ্যাঙের তুরুকে
অন্তর্হিত হয়ে যেতে পারে তারা বটে;
একজোট হেয় কাজ করে মানুষেরা যে- রকম ভোটের ব্যালটে :
তবুও বাঘিনী হয়ে বাতাসকে আলিঙ্গন করে -
সাগরের বালি আর রাত্রির নক্ষত্রের তরে।



০১৯.

স্বপ্নের ধ্বনিরা

ন্বপ্নের ধ্বনিরা এসে বলে যায় : স্থবিরতা সব চেয়ে ভালো;
নিস্তব্ধ শীতের রাতে দীপ জ্বেলে
অথবা ণিভায়ে দীপ বিছানায় শুয়ে
স্থবিরের চোখে যেন জমে ওঠে অন্য কোনো বিকেলের আলো।
সেই আলো চিরদিন হয়ে থাকে স্থির,
সব ছেড়ে একদিন আমিও স্থবির
হয়ে যাব; সেদিন শীতের রাতে সোনালি জরির কাজ ফেলে
প্রদীপ নিভায়ে রব বিছানায় শুয়ে;
অন্ধকারে ঠেস দিয়ে জেগে রব
বাদুড়ের আঁকাবাঁকা আকাশের মতো
স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বল তো।



২০.

আমাকে তুমি

আমাকে তুমি দেখিয়েছিলে একদিন :
মস্ত বড় ময়দান - দেবদারু পামের নিবিড় মাথা - মাইলের পর মাইল;
দুপুরবেলার জনবিরল গভীর বাতাস
দূর শূণ্যে চিলের পাটকিলে ডানার ভিতর অস্পষ্ট হয়ে হারিয়ে যায়;
জোয়ারের মতো ফিরে আসে আবার;
জানালায় জানালায় অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে :
পৃথিবীকে মায়াবী নদীর পারের দেশ মনে হয়।
তারপর
দূরে
অরেক দূরে
খররৌদ্রে পা ছড়িয়ে বর্ষীয়সী রূপসীর মতো ধন ভানে - গান গায় - গান গায়
এই দুপুরের বাতাস।
এক - একটা দুপুরে এক -একটা পরিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত হয়ে যায় যেন।
বিকেলে নরম মুহূর্ত;
নদীর জলের ভিতর শম্বর, নীলগাই, হরিণের ছায়ায় আসা - যাওয়া;
একটা ধবল চিতার - হরিণীর ছায়া
আতার ধূসর ক্ষীরে - গড়া মূর্তির মতো
নদীর জলে
সমস্ত বিকালবেলা ধরে
স্থির।
মাঝে মাঝে অনেক দূর থেকে শ্মশানের চন্দনকাঠের চিতার গন্ধ
আগুনের - ঘিয়ের ঘ্রাণ;
বিকেলে
অসম্ভব বিষণ্নতা।
ঝাউ হরতকী শাল, নিভ্ন্ সূর্যে
পিয়াশাল পিয়াল আমলকী দেবদারু -
বাতাসের বুকে স্পৃহা, উৎসাহ, জীবনের ফেনা;
শাদা - শাদাছিট কালো পায়রার ওড়াওড়ি জোছনায়- ছায়ায়,
রাত্রি;
নক্ষত্র ও নক্ষত্রের
অতীত নিস্তব্ধতা!
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এই সব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো।



২১.

তুমি

নক্ষত্রের চলাফেরা ইশারায় চারি দিকে উজ্জ্বল আকাশ;
বাতাসে নীলাভ হয়ে আসে যেন প্রান্তরের ঘাস;
কাঁচপোকা ঘুমিয়েছে - গঙ্গা ফড়িং সে-ও ঘুমে;
আম নিম হিজলের ব্যাপ্তিতে পড়ে আছ তুমি।
'মাটির অনেক নিচে চলে গেছ? কিংবা দূর আকাশের পারে
তুমি আজ? কোন কথা ভাবছ আঁধারে?
ওই যে ওখানে পায়রা একা ডাকে জমিরের বনে :
মনে হয় তুমি যেন ওই পাখি - তুমি ছাড়া সময়ের এ - উদ্ভাবনে
আমার এমন কাছে - আশ্বিনের এত বড় অকূল আকাশে
আর কাকে পাব এত সহজ গভীর অনায়াসে -
বলতেই নিখিলের অন্ধকার দরকারে পাখি গেল উড়ে
প্রকৃতিস্থ প্রকৃতির মতো শব্দে- প্রেম অপ্রেম থেকে দূরে।



২২.

ধান কাঁটা হয়ে গেছে

ধান কাঁটা হয়ে গেছে কবে যেন - ক্ষেতে মাঠে পড়ে আছে খড়
পাতা কুটো ভাঙা ডিম - সাপের খোলস নীড় শীত।
এই সব উৎরায়ে ঐখানে মাঠের ভিতর
ঘুমাইতেছে কয়েকটি পরিচিত লোক আজ - কেমন নিবিড়।
ঐখানে একজন শুয়ে আছে- দিনরাত দেখা হত কত কত দিন,
হৃদয়ের খেলা নিয়ে তার কাছে করেছি যে কত অপরাধ;
শান্তি তবু : গভীর সবুজ ঘাস ঘাসের ফড়িং
আজ ঢেকে আছে তার চিন্তা আর জিজ্ঞাসার অন্ধকার স্বাদ।



২৩.

শিরীষের ডালপালা

শিরীষের ডালপালা লেগে আছে বিকেলের মেঘে,
পিপুলের ভরা বুকে চিল নেমে এসেছে এখন;
বিকেলের শিশুসূর্যকে ঘিরে মায়ের আবেগে
করুণ হয়েছে ঝাউবন।

নদীর উজ্জ্বল জল কোরালের মতো কলরবে
ভেসে নারকেলবনে কেড়ে নেয় কোরালীর ভ্রূণ;
বিকেল বলেছে এই নদীটিকে : 'শান্ত হতে হবে -'
অকূল সুপুরিবন স্থির জলে ছায়া ফেলে এক মাইল শান্তি কল্যাণ
হয়ে আছে। তার মুখ মনে পড়ে এ- রকম স্নিগ্ধ পৃথিবীর
পাতাপতঙ্গের কাছে চলে এলে; চারি দিকে রাত্রি নক্ষত্রের আলোড়ন
এখন দয়ার মতো; তবুও দয়ার মানে মৃত্যুতে স্থির
হয়ে থাকে ভুলে যাওয়া মানুষের সনাতন মন।
হাজার বছর শুধু খেলা করে
হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকতারে জোনাকির মতো;
চারি দিকে চিরদিন রাত্রির নিধান;
বালির উপরে জোছনা - দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো : দ্বারকার; - দাঁড়ায়ে রয়েছে নৃত, ম্লান।
শরীরে ঘুমের ঘ্রাণ আমাদের - ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;
'মনে আছে?' শুধালো সে - শুধালাম আমি শুধু 'বনলতা সেন?'



২৪.

সুরঞ্জনা

সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছো;
পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন;
কালো চোখ মেলে ওই নীলিমা দেখেছ;
গ্রিক হিন্দু ফিনিশীয় নিয়মের রূঢ় আয়োজন
শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা - নগরীর গায়ে
কী চেয়েছে? কী পেয়েছে? - গিয়েছে হারায়ে।
বয়স বেড়েছে ঢের নরনারীদের,
ঈষৎ নিভেছে সূর্য নক্ষত্রের আলো;
তবুও সমুদ্র নীল; ঝিনুকের গায়ে আল্পনা;
একটি পাখির গান কী রকম ভালো।
মানুষ কাউকে চায়- তার সেই নিহত উজ্জ্বল
ঈশ্বরের পরিবর্তে অন্য কোনো সাধনার ফল।

মনে পড়ে কোন এক তারাভরা রাতের বাতাসে
ধর্মাশোকের ছেলে মহেন্দ্রের সাথে
উতরোল বড় সাগরের পথে অন্তিম আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রাণে
তবুও কাউকে আমি পারিনি বোঝাতে।
সেই ইচ্ছা সঙ্ঘ নয় শক্তি নয় কর্মীদৈর সুধীদের বিবর্ণতা নয়,
আরো আলো : মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়।
যেন সব অন্ধকার সমুদ্রের ক্লান্ত নাবিকেরা।
মক্ষিকার গুঞ্জনের মতো এক বিহ্বল বাতাসে
ভূমধ্যসাগরলীন দূর এক সভ্যতার থেকে
আজকের নব সভ্যতায় ফিরে আসে;-
তুমি সেই অপরূপ সিন্ধু রাত্রি মুতদের রোল
দেহ দিয়ে ভালোবেসে, তবু আজ ভোরের কল্লোল।

একবার তুমি-শক্তি চট্টোপাধ্যায়

একবার তুমি
..........
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর –
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর |
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল - ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি |
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই - পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল -
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় |
মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার | আমরা ঘরবাড়ি গড়বো - সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো |
রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো |

shokti chottopaddhae(শক্তির কবিতা)-১

অবনী বাড়ি আছো
...................
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ


যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
....................
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো

যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে।।



আমি যাই
......
যেখানেই থাকো
এপথে আসতেই হবে
ছাড়ান্ নেই
সম্বল বলতে সেই
দিন কয়েকের গল্প
অল্প অল্পই
আমি যাই
তোমরা পরে এসো
ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে
শাক-সবজি বিলিয়ে
তোমরা এসো



কিছু মায়া রয়ে গেলো
..................
সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত…
জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে
কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের,
শুধু এই –
কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো
পৃথিবীকে।
মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি,
শুধু এই –
ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা,
জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু।



এক অসুখে দুজন অন্ধ
................
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ
দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে
বালিতে আধ-কোমর বন্ধ
এই আনন্দময় কবরে
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ |
হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিক
উজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু উষ্ণ এবং রোমাঞ্চকর
আলিঙ্গনের মধেযে আমার হৃদয় কি পায় পুচ্ছে শিকড়
আঁকড়ে ধরে মাটির মতন চিবুক থেকে নখ অবধি ?
সঙ্গে আছেই
রুপোর গুঁড়ো, উড়ন্ত নুন, হল্লা হাওয়ার মধ্যে, কাছে
সঙ্গে আছে
হয়নি পাগল
এই বাতাসে পাল্লা আগল
বন্ধ ক’রে
সঙ্গে আছে …
এক অসুখে দুজন অন্ধ !
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ ।

নিঃসঙ্গের ছদ্মবেশে - টোকন ঠাকুর

মানুষের ছদ্মবেশে থাকি, আদতে রাক্ষস!

একদিন রাক্ষসপুরীতে ছিলাম। কিন্তু রাক্ষসদের সঙ্গে আমার বনিবনা হতো না। সবসময় খিটিমিটি লেগে থাকত। ভালোবেসে যে রাক্ষুসী আমার পাশে ছায়াচ্ছন্ন দাঁড়িয়েছিল, এক সন্ধ্যার অজান্তে তাকে অন্য রাক্ষসেরা ভক্ষণ করে ফেলেছিল। মনের দুঃখে, স্বপক্ষত্যাগী আমি মানুষের ছদ্মবেশে মানবসমাজে চলে এসেছি। আমিও কবিতা লিখি...

এই হচ্ছে মানুষের মধ্যে থেকেও আমার নিঃসঙ্গতার সংগোপন ইতিহাস। এই হচ্ছে মানুষের সমাবেশে থেকেও আমার মানুষ হতে না পারার ইহলৌকিক যন্ত্রণা। কারণ, সৌন্দর্যলুব্ধক এক মোমের মানবীকে ভালোবাসতে গিয়ে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমি গোত্রান্তরিত রাক্ষস। স্বগোত্রে আমার জন্য এক রাক্ষুসী আত্মাহূতি দিয়েছিল। আর এদিকে আমি মোমের মানবীতে হাত ধরে আবেগে-আবেগে- যেই বলেছি, রাক্ষুসী, প্রিয়ে, তোমাকেই আজ ভালোবাসি, তুমি আমার পাশে দাঁড়াও; কিন্তু সে ভয় পেয়ে ছিটকে পালায়, আর

রাক্ষসের ভয়ে মানবীরা চিরকাল ভীত বলে আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাই, যথাক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে উঠি। নিঃসঙ্গতা এমন একটি উদাহরণ, যে-কেউ গ্রহণে অনিচ্ছুক... হায় রে এমন নিঃসঙ্গ থাকি

সকাল থেকেই একটা শালিক কার্নিশে ভিজছে- স্থিরচিত্রে, নিঃসঙ্গের ছদ্মবেশে আমি এখন ওই ভেজা শালিক পাখি

শালিকের ছদ্মবেশে কবিতা লিখি!

পাখি সম্পর্কিত শেষ কবিতা - টোকন ঠাকুর

প্রেম হলে সেই পাখি, যার সোনালি ডানা ছুঁয়ে দেখবার সৌভাগ্য পাওয়া চাই। যার একটি মায়াবী পালক খসিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। প্রেম সেই পাখি, যার চোখের মণিতে সামুদ্রিক নৌকার মাস্তুল দেখা যায়। যার মসৃণ গ্রীবায় নিঃসন্দেহে রোমিও-জুলিয়েট মঞ্চস্থ হতে পারে। প্রেম সেই পাখি, যার ঠোঁট দেখলেই প্রতীয়মাণ হয়- একজন একা মানুষের আত্মজীবনী কী ভয়ঙ্কর পিপাসার্ত! বীভৎস!

যখনই কেউ প্রেমে পড়ে মানে সেই পাখিতে পড়ে। তখন সে প্রেমরূপ পাখির ডানা ছুঁতে চায়। কারণ, তার অবচেতন মন প্রার্থনা করে ডানার নিচে আত্মগোপন। একুশ শতকের জ্বালায় জ্বলেও প্রেমে এরকম আত্মগোপন এখনো উঠে যায়নি। কিন্তু হঠাৎ কোনো পাখি যখন উড়ে যায়, ডানার নিচের ওমে যে আত্মগোপনকারী সে ধপ করে পড়ে যায়। নিঃশব্দে শব্দ হয়, ধপাস!

অর্থাৎ পাখি উড়ে গেলেই প্রেম উড়ে যায়। সেই প্রেম সেই পাখি আর সন্ধান করেও পাওয়া যায় না। এরপর যত পাখি চোখে পড়ে, সব অন্য পাখি। কোনোভাবেই আমি ভুলতে পারি না, সেই পাখি কোথায় গেল- যার অপরিসীম ডানার নিচে একদিন আত্মগোপনে ছিলাম, ওম সম্মেলন করেছিলাম...

আজ যেসব পাখি ওড়াউড়ি করছে, ডালে বসে আলস্য ভাঙছে- এরা তো জানেই না যে, প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করলেও আমি আত্মগোপনে থাকতে ভালোবাসি। ফলে, এখন আমি বুঝতেই পারছি না, কোন পাখিটার ডানার নিচে ওম্ সম্মেলন সফল হবে, সার্থক হবে?

কোন পাখিটা উড়বে না আর, স্বভাব ভেঙে?

গোধূলিকল্যাণ সংঘের কবিতা - টোকন ঠাকুর

একদিন, ধুলো নিয়ে মুঠো মুঠো কবিতা লিখেছি।
একবার, কাব্যসমালোচনা করতে গিয়ে, আমারই লেখক-বন্ধু, লিখল:
...কবি, মরমী প্রণেতা; কিন্তু তার একটি কবিতার মধ্যেই চব্বিশবার
ধুলো পাওয়া গেছে...’

তাই তো! একটিমাত্র কবিতা পড়তে গিয়ে, যদি চব্বিশবার
ধুলো ঢুকে পড়ে চোখে, নাকে, মুখে
এটা কে সহ্য করবে? কোন দুঃখে?

তারপরও তলে তলে, আমি কিন্তু ধুলোচর্চা করেই চলেছি।
রিয়েলি, আমি এখনো ধুলোর মধ্যেই গেরুয়া সম্ভাবনা
দেখতে পাচ্ছি;
যেমন, প্রত্যেক জোছনাতেই আমি লক্ষ্য করছি-
গৃহত্যাগ কীরূপে জরুরি?
ধুলোকে মাঝেমধ্যে, ধূলি নামেও ডেকেছি। কেননা
আমার মনে পড়েছে, সন্ধ্যার সামান্য আগে, ধুলোর মধ্যে
হাঁটতে হাঁটতে গরু খেদিয়ে বাড়ি ফিরছি
এবং হাই ইশকুলে ওঠার কিছুদিন পর, আমি জানলাম
গোধূলি: হোয়াটস্ কলড্ গোধূলি?

আমি গোধূলির প্রেমে পড়ে যাই! কিন্তু একদিন
সেই গোধূলিকে আমি হারিয়ে ফেলি
এবং আমি শহরে চলে আসি এবং আমি
গোধূলির কথা ভাবতে ভাবতে, ধূলিমলিন হয়ে যাই;

ভবা, সাধে কি আর ধূলিবিদ্যা শিখি?

এবং আজ, ধূলিতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। রাস্ট্রের যে কোনও ফাইলে
যে কোনও সমীক্ষায় ধুলো ঢুকে গেছে।
এদিকে আমি, গোধূলি হারানো কবি
প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে, ঝাঁপ খুলে বসে থাকি
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এক
গোধূলিকল্যাণ সংঘের...

কবিতা বিক্রির কবিতা - টোকন ঠাকুর

যে যাই বলুক, আমি বিবাহিত
বাতাসি বেগম আমার বউ।
আমাদের সুখের সংসার; যাচ্ছে! বেশ
ঢিলিমিলিই তো যাচ্ছে।
কিন্তু মাঝেমধ্যেই ঝামেলা বাঁধিয়ে দিচ্ছে
আমার পুত্ররা, কন্যারাও। তাদের ভাষ্য-
তারা নাকি দুধেভাতে নেই
আমি অসমর্থ পিতা?
আমি নাকি তন্দ্রা ধরে বলি:
‘এই নে, হাটে নিয়ে বেশি দামে বেঁচে আয়
আত্মায় প্রণীত আমাদের টাটকা কবিতা’

বলেন, একজন স্বায়ত্বশীল, বিবাহিত লোক
এসব বলতে পারে?
কিন্তু আমার পুত্র-কন্যারা এত বেয়াড়া আর
বিপ্লবী যে
ওরা লিভটুগেদার চায়, ওরা ভাইবোনেরাই
দিব্যি অভিসারে...
ফলে, আমার দিব্যভাবনা বাড়ে

সিদ্ধান্তে আসি, আমি ওদের নাম রেখেই কি
ভুল করেছি?
পুত্রদের নাম রেখেছি বাক্য; প্রথমটা প্রথম বাক্য
তারপরেরটা দ্বিতীয় বাক্য, তিন নাম্বারে তৃতীয় বাক্য!
কন্যাদের নাম রেখেছি ওদের মা’র নাম অনুসারেই-
‘হাওয়া’
বড়টা দস্যিহাওয়া, মেঝটা শান্তভারি, তারপর হিমেলহাওয়া
এবং কদিন আগেই যে জন্মেছে, ওর নাম হুহুমনা,
আজকাল তো হুহুমনাহাওয়ার জন্যই আমার এত টান
এত ভালবাসার গান!
কিন্তু প্রণীত বাক্য, মাই সন
এন্ড প্রণীত হাওয়া, মাই ডটার-
আজকাল কারওর আচরণই আমার আর ভালো লাগছে না

চতুর্থ বাক্য ঘরে ফিরছে না পাঁচদিন,
হাওয়াদের মধ্যেও একজনকে পাওয়া যাচ্ছে না;
বধু আমার বাতাসি বেগম পালিয়ে গেছে
অথচ আমি বিবাহিত... অযোগ্য এক পিতা!

আমি নাকি সন্ধ্যা দেখেই বলি:
এই নে, সূর্যাস্তের একটু আগের আকাশ থেকে
পেড়ে আনা, দগ্ধীভূত, লালচে কবিতা;
এটা ঠিকই বিক্রি হয়ে যাবে
গ্রন্থে গ্রন্থে, প্রত্যন্তে-
নিয়ে যা, হাটে নিয়ে যা

গলির মোড়ে খাম্বা,খাম্বায় বাড়িভাড়া সাবলেট,পড়াইতে চাই,বটিকা লিপিডিশ, ঘটক ও কাজি অফিস ইত্যাদি

এক অজ্ঞাতনামা চাইনিজ কবির কবিতা আমার ভালো লেগে যায়
মনে ধরে যায়

"চা দে, দুধচিনি বাড়ায়ে দিস..." বলেই টি-স্টলে দাঁড়ানো কবি যেদিকে তাকায়
সেদিকেই প্রেমিকার বাড়ি

বাড়ির ছাদে নাইলনের টান টান দড়ি
কবি সেই টান টান দড়ির দিকেই নেত্র মেলে থাকে...

কবির বিবৃতি: দড়িতে চুলের ফিতা শুকোনো দেখে
আমার মনে ভার্মিলিয়ন ভাব জমে খুব, খুব

দড়িতে যখন দেখি, উনার ওড়না-কামিজ রোদে পুড়ে যাচ্ছে
সেই পোড়নে তখন আমার ভালোবাসা ফাল দে ওঠে, ডিগবাজি খায়

আর যখন দড়িতে দোলে তোমার ভেজা পায়জামা/ সায়া
তক্ষুণি মনে হয়, পায়জামা/ সায়া শুকিয়ে ওঠার আগেই
তোমাকে আমি বিয়ে করে ফেলি

দেরি করলে ফেরি মিস হবে...

উত্তরের হাওয়া- টোকন ঠাকুর

কার কথা কীভাবে বলব আমি?

বন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঝরাপাতা—কারা তাতে লেখে আর কারাই বা পাঠক-পাঠিকা? কার কাছে বলা যায়—উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে? সন্ধে থেকেই ওঁত্ পেতে বসে আছে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার! মনে হয়, ভাবনা সম্প্রচার কেন্দ্রের আজ রজতজয়ন্তী, তুমুল ভাবনাসূচি...ভাবনাকে দেখতে আসে বুদ্বুদ—দোস্তে দোস্তে জুয়া খেলে কয়েক সেকেন্ড; এর মধ্যেই ঝাঁপ দেয় গনগনে কবিতাখসড়া, এর মধ্যেই উঁকি দিয়ে যায় এক স্বর্ণমৃগয়া, নড়ে ওঠে ঝোপঝাড়, যেহেতু সতর্ক...পদবুলি বাইপাস করে ছুটতে থাকি ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে বনবনানির নির্জনতায় যেখানে এলাম—ওহ কী দুরবস্থা, নিজেই রচনা করেছি সুনিপুণ আত্মঘাতী ব্যাকরণ—আমি এই জঙ্গলের গাছে গাছে ফেরার কোনো চিহ্ন এঁকে রেখে আসিনি, কীভাবে ফিরব? আমি কি আজ অরণ্যমন্ত্রী? না, আমি এই বনবাস উদ্যাপন করছি না। হাওয়া-বাতাসের অর্কেস্ট্রায় এই মর্মর কম্পোজিশন আমার ভালো লাগছে না। আমি জানি, এক দিগ্বালিকা বড় হচ্ছে ঘরের মধ্যে, রাতে; বাইরে বসন্তপূর্ণিমা, বাইরে অঙ্গার বৈরাগীর গান—পাতা-টাতা নাই বনে, ভালোবাসি তোমারে, হরিণেরা কি জানে, ভালোবাসি তোমারে...? ঘরের মধ্যে বড় হচ্ছে বালিকা, বালিকারা বড় হচ্ছে কার জন্যে—এই প্রশ্ন কোনো প্রশ্নই হয়ে উঠত না, যদি, আমাদের কবিতার চেয়ে করে আসা লোকাচার, ধর্মাচার, তদীয় গ্রন্থাচার বড় না হতো! আমি জানি এক দিগ্বালিকা বড় হচ্ছে ঘোরের মধ্যে, ঘরের মধ্যে, জনপদে। সে বালিকা জানে তার ভালোবাসা সেই ডালিম, ধীরে ধীরে বড় হয়, লুব্ধক প্রেমিকের হাতে পড়লেই পাকা ডালিমটা ফেটে যায়, পাকা ডালিম ফাটা ডালিম ভেতরটা দেখিয়ে দেয়...আমি সেই ফলের রসময়ী দানাগুচ্ছ থেকে বহুদূরে এক স্বর্ণমৃগয়ার খপ্পরে পড়ে এই বনভূমির মধ্যে...আজ আর এই গ্রিন অভিবাস পছন্দ করছি না।

যদিও কোকিল ডাকছে, এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে, স্বাভাবিকতার পতন ঘটছে। এ সময় কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে, এ সময় উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে, দক্ষিণের বারান্দায় ওঁত্ পেতে বসে থাকে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার...মনে হয়, শিহরণ শব্দের অর্থ বুঝতেই দিগ্বালিকা আজ আর স্কুলে যাবে না, কিন্তু স্কুলে যাবার নাম করে সে ঠিকই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়বে...

শিহরণ, তোর কথা কীভাবে লিখব আমি?